ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন- প্রতিদিন মুখের যত্ন

সুস্থ এবং সুন্দর ত্বক চাইনা এমন মানুষ পাওয়া হয়তো দূরূহ। আর তা যদি হয় কেমিকালমুক্ত ঘরোয়া পদ্ধতিতে তাহলে তো কোন কথাই নেই।নারী কিংবা পুরুষ সকলেই চাই কোন রূপ ক্ষতি ছাড়াই ঘরোয়া পদ্ধতিতে সৌন্দর্য ধরে রাখতে। তবে ব্যস্তময় সময়গুলোতে ত্বকের খুব একটা যত্ন নেওয়ার সময় আমাদের অনেকেরই হয় না। আবার যাওবা হয়ে থাকে তা বাজারের প্রসাধনীর ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে তুলে। যার অধিকাংশেই রয়েছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল এবং রাসায়নিক বিষক্রিয়া।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন


যা ত্বকের ভালোর চেয়ে বরং আরো বেশি ক্ষতি সাধন করে। তবে প্রাকৃতিক উপায়ে বা ঘরোয়া উপাদানে রূপচর্চা যেমন স্বাস্থ্যসম্মত তেমনি ভাবে ক্ষতির কোন সম্ভাবনাও থাকে না। আর তাই স্বাস্থ্যজ্জ্বল ত্বক পেতে কর্মময় জীবনের থেকে অন্তত সপ্তাহে একদিন প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। যা আপনাকে করে তুলবে আরো মোহময় এবং সুন্দর।

পোস্ট সূচীপত্রঃঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন- প্রতিদিন মুখের যত্ন

  • ভূমিকা
  • প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
  • রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন
  • সঠিক ত্বকের যত্নের রুটিন 
  • তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
  • সিরাম নাকি ক্রিম প্রথম
  • সারকথা
ভূমিকা 
মানব জীবনের একটি চিরাচরিত সাধারণ ইচ্ছা হলো নিজেকে আরও সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তোলা। বর্তমান যুগে কর্মব্যস্ততা আমাদের জীবনকে এমনভাবে ঘিরে নিয়েছে যে আমরা নিজেদের বাড়তি যত্ন নেয়ার জন্য তিল পরিমানও সময় পাইনা।আর তাই আমরা আমাদের আকর্ষণীয় করে তুলতে ছুটে থাকি বাজারের কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনীর দিকে।

যার অনেকটাই আমাদের ত্বকে ড্যামেজ করার জন্য দায়ী। তবে প্রাকৃতিক ভাবে রূপচর্চা করলে ত্বকের যেমন কোন ক্ষতি হয় না তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা থাকে দীর্ঘস্থায়ী। আসুন আমরা জেনে নেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন এবং প্রতিদিন মুখের যত্ন নেওয়ার কিছু প্রাকৃতিক উপায়।

প্রতিদিনের ত্বকের যত্ন
আমাদের ত্বককে সুন্দর রাখতে অবশ্যই প্রতিদিন নিয়ম করে ত্বকের কিছু যত্ন নেয়া উচিত। কেননা কর্মব্যস্তময় এই জীবনে আমাদের প্রতিদিনই বাইরে যাওয়া হয়। যার ফলে বাইরের ধুলোবালি এবং বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া সহজেই আমাদের ত্বকে জমে গিয়ে ক্ষতিসাধন করে থাকে। এর ফলে সৃষ্টি হয় ব্রণ এবং এলার্জির মতো নানা সমস্যার।
যা ত্বকে সৃষ্টি করে বিভিন্ন রকমের দাগের। এছাড়াও রয়েছে রোদে পোড়া সমস্যা। যা ত্বককে রীতিমতো নষ্ট করে ফেলে এবং মৃত কোষের সঞ্চার করে। ত্বককে ভালো রাখতে প্রতিদিনের যত্ন নেয়া আবশ্যক। যেমনঃ
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা
  • শাকসবজি বেশি বেশি খাওয়া
  • তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা
  • ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা
  • দিনে কয়েকবার মুখ ধোয়া
  • মুখে যতটা সম্ভব হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
  • পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম
এইতো গেল প্রতিদিনই ত্বকের যত্নের কিছু মৌলিক উপায় যা তাকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে। এখন আসুন আমরা জেনে নিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির কিছু উপায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে যুগ যুগ ধরে নানা প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যা কিনা কোনো রকম ক্ষতিকর ছাড়াই অত্যন্ত কার্যকরী হিসেবে ভীষণই পরিচিত। আসুন আমরা জেনে নিই ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির কিছু প্রাকৃতিক উপায়।
অ্যালোভেরাঃঅ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী একটি অত্যন্ত কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান যাতে করে ত্বক হয় উজ্বল এবং টানটান। অ্যালোভেরা খুবই সহজলভ্য যা বাজারে সহজে পাওয়া যায়। তাছাড়া অনেকের বাসা বাড়িতেও এটি দেখা যায়। অ্যালোভেরা জেল ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। এবং বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
লেবুঃ রূপচর্চায় লেবু দাগ দূর করতে বহুল ব্যবহৃত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। তবে মনে রাখতে হবে লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ত্বকের ক্ষতিসাধন করতে পারে বিধায় ত্বকে সরাসরি লেবুর ব্যবহার করা যাবে না। বরং লেবুর সঙ্গে মধু ,হলুদ ইত্যাদি সংমিশ্রণ করে ব্যবহার করা উচিত।
মধুঃমধুর উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সবার জানা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। যার গুনাগুনের জুড়ি মেলা ভার। মধু ত্বকের মৃত কোষ কে দূর করে ত্বকে করে টানটান এবং উজ্জ্বল।
হলুদঃ হলুদ মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও সেই আদি থেকে ত্বকের চর্চায় তার গুনাগুন ধরে রেখেছে। আর তাই সর্বত্রই হলুদের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। এটি ত্বককে দাগহীন করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মুলতানি মাটিঃ ত্বকের যত্নের আরেকটি অনন্য উপাদান হলো মুলতানি মাটি। যা প্রাচীনকাল থেকে তার সুখ্যাতি ধরে রেখেছে এখন অবধি।
চন্দনঃ ত্বককে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যজ্জল করে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলতে চন্দনের জুড়ি মেলা ভার। চন্দনে থাকা বিশেষ উপাদান ত্বককে ফর্সা করতে সাহায্য করে এবং দাগহীন করে তোলে।
গোলাপজলঃ রূপচর্চায় গোলাপজল একটি অনন্য প্রাকৃতিক উপাদান। যা ত্বককে ফর্সা করার জন্য দায়ী।
 শসাঃ শসা যা চোখের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।শুধু চোখের কালো দাগ নয় ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।
বেসনঃ ক্লিনার হিসেবে বেসন অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। 
এছাড়াও রয়েছে টক, দই চালের গুড়া ইত্যাদি। যা ত্বককে স্থায়ীভাবে উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।

রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন
অনেকে দিনের সবটা ক্লান্তি নিয়ে রাত্রিতে ত্বকের তেমন যত্ন নেন না। যা  ত্বকের ড্যামেজ করার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে। রাতে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার করা জরুরী। আসুন আমরা জেনে নিই রাতে ঘুমানোর আগে মুখের যত্ন সম্পর্কে কিছু টিপস।
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবশ্যই মেকআপ তুলে ফেলা উচিত। এছাড়াও যারা মেকআপ করেন না তাদের ও সারাদিনের ধুলো ময়লা পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে-
  • মুখ ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে
  • ডাবল ক্লিনজিং ব্যবহার করতে হবে
  • ফেইস মাস্ক ব্যবহার করা উচিত এতে ত্বক তার আদ্রতা ফিরে পাই
  • ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উত্তম
  • ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ঠোটে লিপ বাম ব্যবহার করা উচিত এতে ঠোঁট থাকে কোমল।
  • চোখের নিচের কালো দাগ থেকে বাঁচতে আইক্রিম ব্যবহার করতে হবে।

সঠিক ত্বকের যত্নের রুটিন 
সঠিক ত্বকের যত্নের জন্য চাই সঠিক রুটিন।ত্বকের যত্ন নিয়মিত করা অত্যন্ত জরুরী। যা আপনার ত্বককে করে তুলবে কোমল এবং স্বাস্থ্যকর। ত্বকের যত্নে অনেক বেশি প্রসাধনী ব্যবহার থেকে দূরে থাকাই ভালো। তবে ত্বককে ভালো রাখতে মৌলিক উপাদান গুলো অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ
  • সানস্ক্রিন নিয়মিত ব্যবহার করা
  • মশ্চারাইজার ব্যবহার করা
  • বেশি বেশি পানি পান করা
  • ত্বকে হাত না লাগানো
  • বেসিক স্কিন কেয়ার
  • ক্লিনজিং ব্যবহার ইত্যাদি।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
তৈলাক্ত ত্বক সবচেয়ে বেশি সেনসিটিভ হয়ে থাকে। বিধায় খুব সহজেই ত্বকে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর তাই তৈলাক্ত ত্বকের বাড়তি যত্ন অতি প্রয়োজনীয়। তাছাড়া তৈলাক্ত ত্বকে চিটচিটে ভাব বেশি দেখা যায়। যা অনেকের কাছে অস্বস্তিকর অবস্থায় সৃষ্টি করে। আর তাই তৈলাক্ত ত্বক থেকে রেহাই পেতে কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমনঃ
  • দিনে অন্তত দুইবার মুখ ধোয়া
  • তৈলাক্ত ত্বকের সঙ্গে যায় এমন মশ্চারাইজার ব্যবহার করা
  • ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করা
  • টোনার ব্যবহার করা
  • এছাড়াও তৈলাক্ত ত্বক থেকে রক্ষা পেতে ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমনঃ
  • ত্বকের সরাসরি মধু ব্যবহার 
  • লেবুর ব্যবহার
  • মুলতানি মাটির ব্যবহার
  • চালের গুড়ার ব্যবহার ইত্যাদি।

সিরাম নাকি ক্রিম প্রথম 
সিরাম সাধারণত ক্রিমের চেয়ে হালকা হয়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সিরাম ব্যবহার করতে হয়। যদি ত্বকের ধরন জানা না থাকে সেক্ষেত্রে স্কিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া সিরাম কখন ব্যবহার করতে হবে তা প্যাকেটের গায়ে দেখে নিতে হবে। সিরাম মূলত এন্টি এজিং বা ত্বক রিপিয়ারিং এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।

অপরদিকে ক্রিম ঘন হয়ে থাকে। এবং শুষ্কতা রোধ করতে সাহায্য করে। ক্রিম যখন তখন ব্যবহার করা যায়। এবং সিরাম এর চেয়ে দামেও কম। সিরাম এবং ক্রিম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সিরাম আগে ব্যবহার করতে হবে।

সারকথা
সব শেষে বলা যায় কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী।তাছাড়া উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। তাই কখনোই ত্বকের যত্নে অলসতা বা  কার্পণ্য করা উচিত নয়। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ত্বকের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত এবং অতিরিক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার এড়িয়ে চলাই উত্তম।

আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আপনাদের সৌন্দর্য ও সুস্থতা কামনা করে আজ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪