কবুতরের রোগ -চিকিৎসা ও ঔষধের নাম

কবুতরের সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ হয়তো পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। নিত্যদিনের সব পূরণের কবুতরকে শখের প্রাণী ও বলা চলে। কেননা বেশিরভাগ মানুষ কবুতর পুষে থাকেন মূলত শখের বসে। তবে শুধু শখের বসে নয় বরং এর মাংস যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর হওয়ায় অনেকেই কবুতর পোষার দিকে ঝুঁকে থাকলেও অনেকে কবুতরের রোগ -চিকিৎসা ও ঔষধের নাম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।যা কবুতর পালনে আগ্রহ কমে যাওয়ার ও কারণ বটে।
কবুতরের রোগ -চিকিৎসা ও ঔষধের নাম


কবুতরের রয়েছে বাহারি প্রজাতি। দেশি-বিদেশি নানান জাতের কবুতর যেমন মনে আনন্দের সূচনা করে ঠিক তেমনি চোখের শান্তি ও দিয়ে থাকে।কবুতরের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি পোষা যেমন সহজ তেমনি খুব একটা ঝামেলার প্রয়োজন হয় না। তবে অন্যান্য প্রাণীদের মত কখনো কখনো কবুতরেরও নানা রকম রোগ ব্যাধি পরিলক্ষিত হয়। যা অনেক সময় উদ্বিগ্নতার বিষয় হয়ে থাকে। তবে কবুতরের রোগ সম্পর্কে পূর্ব থেকেই জানা থাকলে খুব সহজেই এর রোগ নির্ণয় করা যেমন সহজ তেমনি অতিদ্রুত চিকিৎসা প্রদানের সহজ হয়ে থাকে। আর তাই আজ আমরা জানবো কবুতরের রোগ চিকিৎসা ও ঔষধের নামসমূহ সংক্রান্ত কিছু তথ্য।

সূচীপত্রঃকবুতরের রোগ-চিকিৎসা ও ঔষধের নাম

ভূমিকা

 শহরে কিংবা গ্রামে ফ্যান যাই হোক না কেন অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে কবুতর সবচেয়ে পছন্দের প্রাণী গুলোর মধ্যে একটি। এরা যেমন দেখার দিক থেকে সুন্দর ঠিক তেমনি এদের চাঞ্চল্যকর আচরণও সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে। কবুতর প্রেমিকের কাছে এদের বাক বাকুম ডাক যেন শান্তির প্রলেপ মাখিয়ে দেয়। এই প্রাণীটি সচরাচর খাচা বা খোপের মধ্যে লালন পালন করা হয়ে থাকে। 

যার ফলে জায়গা কম লাগে । তাছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর তার নিজের খাদ্য নিজেই সংগ্রহ করে থাকে। এ মাংস যেমন পুষ্টিকর তেমনি সুস্বাদু। এছাড়া এদের খুব দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে থাকে বিধায় বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়াও খুব অল্প সময়ে সম্ভব হয়ে থাকে।প্রাণীটি পালন করতে খুব একটা যত্নে প্রয়োজন না পড়লেও মাঝে মাঝে কিছু রোগের দেখা মেলে।
যা অনেকাংশে খুব একটা ভয়ের উদ্যোগ না সৃষ্টি করলেও কিছু কিছু রোগ প্রাণীটি জন্য প্রাণঘাতীয় হয়ে থাকে। তাই কবুতর লালন পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং রোগ সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা রাখা অত্যন্ত জরুরী। তাই আসুন আমরা জেনে নিই কবুতরের রোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য যা আপনাকে সচেতন হতে সাহায্য করবে বলে আশা করি।

কবুতরের কি কি রোগ হয়

 কবুতরের বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়। এর কারণ বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ঠান্ডা বা গরম জনিত কারণে কবুতর অসুস্থ হতে পারে। এছাড়া ছত্রাক কিংবা ভাইরাস জনিত কারণেও কবুতরের নানা ধরনের অসুখ দেখা যায়। কবুতরের মধ্যে যে সকল রোগ সচরাচর দেখা যায় সেগুলি হলঃ রানীক্ষেত, বসন্ত, সালমেনেলসিস, ক্ল্যামাইডিওলোসিস, পরজীবী রোগ, করাই যা, মাইক্রোপ্লাজমোসিস, বায়োটিন ,ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি১, ভিটামিন বি২ ইত্যাদি।

কবুতরের রোগ নির্ণয়

 কবুতরের রোগের লক্ষণ জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করতে পারি। আসুন আমরা জেনে নেই কবুতরের কয়েকটি রোগের লক্ষণসমূহ।

  • রানীক্ষেতঃ রানীক্ষেত রোগের লক্ষণ গুলো হল সবুজ পায়খানা, মাথা ঘোরা, ঝিমান্‌, মুখ হা করে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি।
  • দুঃখেরওস্মল পক্স বা বসন্তঃ এটি একটি বেরুলিয়া কলম্বিয়া জাতীয় ভাইরাস জনিত রোগ। এ রোগ হলে পায়ে কত দেখা যায়, এবং জীবনের স্থানের পালকহীনতা পরিলক্ষিত হয়।
  • সালমেনেলসিসঃ রোগ হলে পক্ষপাত সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় ও দুর্গন্ধময়ী খেলাযুক্ত পায়খানা। এছাড়াও কবুতর শুকিয়ে যেতে থাকে। সেই সাথে ভারসাম্যহীনতা পরিলক্ষিত হয়।
  • পরজীবী রোগঃ এস্কারিস,ট্রাইকোমোনিয়া ইত্যাদির কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। মালের সঙ্গে রক্ত খাদ্যহীনতা শুকিয়ে যাওয়ার খাদ্যে অরুচি ইত্যাদি এই রোগের ফলে দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকে।
  • বায়োটিনঃ আমরা প্রজাতের সাথে সাথে ডিম পাড়ার ক্ষমতা কমতে থাকে।
  • মাইক্রোপ্লাজমোসিসঃ শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। মুখ চোখ দিয়ে পানি ঝরে অর্থাৎ সর্দি তাদের ভাব দেখা যায় এবং তৃতীয় দুর্গন্ধময় অবস্থা পরিমিত হয়ে থাকে।
  • কলেরাঃ সবুজ ও হলুদ পায়খানা ডায়রিয়ার আকারে দেখা যায়। সর্দির পাদুর্ভাব থাকে। শ্বাসকষ্ট এবং অত্যাধিক পানির পিপাসার মত সমস্যা ও দেখা যাই।

কবুতরের ঝিমানো ও চুনা পায়খানা

কবুতরের ঝিমানো
কবুতর ঝিমানোর একটি কারণ হতে পারে কবুতর এর কোনো রোগের আশংকা।অনেক সময় কবুতর এর জ্বর এবং ঠান্ডা লাগাও কবুতর এর ঝিমানোর একটি কারণ হতে পারে।কবুতর এর মাঝে এ সমস্যা দেখা দিলে অনতিবিলম্বে কবুতরটিকে সুস্থ কবুতর থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে এবং ঔষধ এর ব্যবস্থা করতে হবে।

কবুতর এর চুনা পায়খানা
কবুতর এর জদি রাণীক্ষেত বা কলেরা রোগ হয় সে ক্ষেত্রে কবুতর চুনা কিংবা সবুজ পায়খানা করতে পারে।এমতবস্থায় আক্রান্ত কবুতর বাকি কবুতর থেকে অবশ্যয় আলাদা করে রাখতে হবে।কেননা এ রোগটি সংক্রামক হওয়ায় খুব সহজেই সুস্থ কবুতরগুলো সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি দেখা যায়।তবে ঘাবড়িয়ে যাওয়ার কিছু নেয় কারণ এ রোগের ঔষধ এখন বাজারে সহজল্ভ্য।তাই কালক্ষেপণ না করে কবুতরকে সঠিক ঔষধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা জরুরি।

কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা

 ওপরে আমরা কবুতরের বিভিন্ন রোগ এবং লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে। এখন আমরা কবুতরের রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানব। কবুতরের বিভিন্ন রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। যেমনঃ
  • রানীক্ষেতঃরানীক্ষেত রোগের জন্য লেটার ইমিউনো স্টেমুলেটর, এন্টিবায়োটিক ,ভিটামিন, রোগের টিকা প্রদান করতে হবে।
  • কৃমির সমস্যাঃকবুতরের কৃমির সমস্যা দেখা দিলে নানা ধরণের অসুখের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।তাই একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কবুতরকে অবশ্যয় কৃমির ঔষধ খাওয়ানো উচিৎ।
  • বসন্তঃভাইরাসজনিত রোগ হিসেবে পরিচিত বসন্ত রোগটি কবুতরের দেখা দিলে পা বা পাখনা ইত্যাদিতে প্রায়শই ফোসা বা গুটি গুটি দেখা যায়।এক্ষিত্রে কবুতরকে ঔষধ খাওয়াতে হবে প্রয়োজনে ভ্যাক্সিন প্রদান আবশ্যকীয়।
  • মাইকোপ্লাজমসিসঃভাইরাস এবং ব্যকটেরিয়ার সমন্বইয়ে মূলত এ রোগ দেখা যায় যাতে কবুতরের নাক দিয়ে শ্লেষাজাতীয় পদার্থ বের হতে দেখা যায় সেই সাথে নিঃশ্বাসের সমস্যা,চলাফেরায় অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে।এমতবস্থাই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কবুতরের ভিটামিন ঔষধের নাম

কবুতরের জন্য নানা ধরণের ভিটামিন এখন বাজারে সহজলভ্য।যেমনঃRENA B+,E sell,Vitamin C,All enzyme সহ আর বেশ কিছু ভিটামিন।এ ছাড়াও রইয়েছে অনেক প্রকারের মাল্টিভিটামিন।যেমনঃভিটামিন B1,B2,B6,রেনা-WS,THIVIN ইত্যাদি।

কবুতরের জন্য কোন এন্টিবায়োটিক ভালো

মানুষ এবং অন্যন্য প্রাণীর মতো কবুতরের নানা ধরণের জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুখ রয়েছে যেসবের ঔষধ হিসেবে অ্যান্টবায়োটিক এর আশ্রয় নিতে হয়।
কবুতরের বিভিন্ন ধরণের অ্যান্টবায়োটিক রয়েছে।যেমনঃCOSOMIX PLUS,SULTRIK POWDER,DOXIVET ইত্যাদি।

শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায় কবুতর অনেকের কাছেই শখের প্রাণী হিসেবে বেশি পরিচিত হলেও কবুতর পালন বর্তমানে লাভজনক পেশা হিসেবে ও ব্যপক সমার্দ্রিত।তবে মনে রাখতে হবে কবুতর পালন শখ হিসেবে নেওয়া হোক বা পেশা হিসেবে কবুতর সম্পর্কে যথাযথ জেনে তারপর কবুতর পালন শুরু করা উচিৎ। নচেৎ এতে লাভের চেয়ে বরং ক্ষতি বেশি হবে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

তাছাড়া কবুতরকে অসুখ মুক্ত রাখতে শুষ্ক ও পরিপূর্ণ আলোবাতাস আছে এমন পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে।সেই সাথে যে কোনো ঔষধ খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যয় সঠিক রোগ নির্ণয় করা অত্যান্ত জ্রুরী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪