উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ-তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

উচ্চ রক্তচাপকেই মূলত হাইপারটেনশন বলা হয়।যখন রক্তের চাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে তাকে উচ্চরক্তচাপ বলে আখ্যায়িত করা হয়।উচ্চ রক্তচাপ জনজীবনে একটি নীরবঘাতক হিসেবে পরিচিত নাম। তবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দিনকেদিন বাড়লেও রোগী বেশির ভাগ সময় জানেনই না উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ-তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়্সমূহ । 



 নীরবঘাতক এই রোগটি যদিও এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তবে সঠিক নিয়মনীতি মেনে চললে নিরাময়ের সাথে সাথে,স্বাভাবিক জীবন যাপনও সম্ভব।

পোস্ট সূচীপত্র উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ-তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

ভূমিকা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী সমগ্র বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনে আক্রান্ত।রোগটিতে বছরে গড় হিসাবে মৃত্যুর হার ও নেহায়েত কম নয়।রোগটি মূলত প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়।নানাবিধ কারণে এ রোগটি হলেও স্বাস্থ্য সচেতনতাই পারে এই নীরবঘাতক থেকে বাঁচাতে।আসুন তবে জেনে নেওয়া যাক উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও কারণ- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় সম্পর্কে কিছু তথ্য।

উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে

উচ্চ রক্ত চাপকে মূলত হাইপারটেনশন বলা হয়ে থাকে।রক্তচাপের সাধারণত দুইটি অংশ থাকে সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক। রক্তচাপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উপরেরটাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক এবং নিচেরটাকে বলা হয় সিস্টোলিক।
একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার হয়ে থাকে।কিন্তু যদি ১২০/৮০ মিলিমিটারের চেয়ে রক্তচাপের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যায় তবে সে অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়ে থাকে।উচ্চ রক্তচাপের ফলে মূলত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিডনি, হার্ট,চোখ ইত্যাদি।এমনকি এর ফলে স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ

যদি হাইপ্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের কোনো কারণ জানা যায় না তবুও অনেকের ধারণা অতিরিক্ত চিন্তাই হচ্ছে হাইপ্রেসারের কারণ। তবে ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়।উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেসারের নানাবিধ সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে।যেমনঃ
  • মাত্রাতিরিক্ত লবন খাওয়ার অভ্যাস
  • অতিরিক্ত মেদ জমা বা ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
  • বংশানুক্রম
  • তেল-চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহ
  • নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন
  • ধূমপান করা
  • অপর্যাপ্ত ঘুম
  • অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তা
  • অস্বাস্থ্যকর জীবনাচলন
  • ডায়াবেটিস
  • গর্ভধারণ অবস্থায়
  • কিছু কিছু ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন
  • গ্রন্থির টিউমার
  • কিডনিজনিত রোগছাড়াও আরও বেশকিছু রোগের প্রভাবেও উচ্চরক্তচাপ দেখা দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপের নানাবিধ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।যেগুলো দেখে অবহেলা না ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা নিরীক্ষা করার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে রোগী উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত কিনা।নিচে কিছু লক্ষণসমূহ তুলে ধরা হলোঃ
  • মাথা যন্ত্রণা করা,বিশেষ করে মাথার পেছনে।
  • বমি অনুভব করা
  • ক্লান্তি অনুভব করা
  • চোখে ঝাপসা দেখা
  • বুকে ব্যাথা
  • কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া
  • হাত এবং পা ফুলে যাওয়া
  • মাথা ঘোরা
  • অল্পতেই রাগ করা
  • অস্থিরতা
  • ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।

উচ্চ রক্তচাপের ফলে কি হয়

উচ্চ রক্তচাপে রোগীর মারাত্মক ঝুঁকি থাকে বিভিন্ন রকমের বড় ধরণের ব্যধিতে জড়ানোর।যেমনঃ
  • হার্ট অ্যাটাক
  • কিডনির সমস্যা
  • স্ট্রোক করা
  • চোখের সমস্যা
  • ধমনীর সমস্যা ইত্যাদিসহ মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়।

উচ্চ রক্তচাপ কমানোর সহজ উপায়

শরীর সুস্থ রাখতে এবং স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত এই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এর কিছু করণীয় রয়েছে।যেমনঃ
  • মাত্রাতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলা
  • অতিরিক্ত চর্বি ঝরিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • নেশা জাতীয় দ্রব্য এড়িয়ে চলতে হবে
  • ধূমপান পরিহার করা
  • পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো
  • অতিরিক্ত চিন্তা থেকে বিরত থাকা
  • ব্যথানাশক ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করা
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • কিডনী,গ্রন্থি টিউমার ইত্যাদির সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলা
  • বংশানুগত উচ্চরক্তচাপের সমস্যা থাকলে মাঝে মাঝে চেক আপ করানো ইত্যাদি।

তাৎক্ষনিক ভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

হঠাৎ করেই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিলে রক্তচাপ কমাতে তাৎক্ষণিক ভাবে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।যেমনঃ
  • বিশ্রাম নেওয়া
  • মাথায় বরফ কুচি দেওয়া,বা মাথা ঠান্ডা রাখা
  • দুশ্চিন্তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা
  • ৭০% কোকোযুক্ত চকলেট খাওয়া যেতে পারে
  • অনেকে তেঁতুল পানি খেয়ে থাকেন, এই ভেষজটি কিছুটা হলেও কার্যকর।
  • কথিত আছে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রসুনের কোয়া অনেক ভালো কাজ করে।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা
  • ভেষজ জাতীয় চা পান করা (যেমনঃজবা ফুলের চা)
  • মানসিক চাপ থেকে বিরত থাকা
  • অতিরিক্ত শব্দ থেকে দূরে থাকা
  • পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি।

সারকথা

পরিশেষে বলা যায় বেঁচে থাকলে রোগ হবেই।তবে কোনো রোগকেই অবহেলা করা উচিৎ নয়।বরং যে কোনো রোগের দেখা দিলে অবশ্যই তা অনতিবিলম্বে প্রতিকারের চেষ্টা করতে হবে সেই সাথে যেকোনো ঔষধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ আবশ্যকীয়।
আপনাদের সুস্থ জীবনের প্রত্যাশা রেখে আজ এ পর্যন্তই।আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হবেন।
-ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪