কালো জিরা খাওয়ার উপকারিতা -অপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

 শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে চলে আসা একটি খাবার হল কালোজিরা। যা মসলা হিসেবে বহুল পরিচিত হলেও ঔষধ হিসেবে এর পরিচিতি খুব একটা কম না। এর নানা উপকারী দিক সম্পর্কে অনেকে অবগত। কালোজিরা তার গুনাগুন অক্ষুন্ন রেখে সুনাম ধরে রেখেছে সেই আদি থেকে।

নানাবিধ ব্যবহারের ফলে কালোজিরা একটি আস্থার নাম। কালোজিরায় রয়েছে ভিটামিন সহ শর্করা আমিষ ইত্যাদির মত আরো নানারকমের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। তাই আজ আমরা জানবো কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।

পোস্ট সূচিপত্র কালো জিরা খাওয়ার উপকারিতা -অপকারিতা এবং কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম

  • ভূমিকা
  • কালোজিরার পুষ্টিগুণ
  • কালো জিরার উপকারিতা
  • কালোজিরা খাওয়ার হাদিস
  • টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয়
  • খালি পেটে কালোজিরার উপকারিতা
  • কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
  • প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
  • প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত
  • কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা 
  • সারকথা

ভূমিকা 
পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ কালোজিরার রয়েছে বহু গুরুত্বপূর্ণ দিক । শুধু মসলা হিসেবেই নয় ঔষুধি গুনাগুন সম্পন্ন এই কালোজিরা রূপচর্চার ক্ষেত্রেও জোরালো অবদান রেখে চলেছে। রান্নার কাজেও ব্যবহার হয় এই কালোজিরা। এছাড়াও বেকারিতে বিস্কুট, নিমকি ইত্যাদি তৈরিতেও কালোজিরার ব্যবহার দেখা যায়। তাছাড়া ভাজাপোড়া এমনকি রুটিতেও কালোজিরা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কালোজিরা তেল সম্পন্ন হওয়ায় তা সর্বজনীন ব্যাপক সমাদৃত।
কালোজিরার পুষ্টিগুণ 
নানা, পুষ্টি গুণের সমৃদ্ধ এই কালোজিরা। এর গুনাগুন সর্বজন স্বীকৃত। মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরায় থাকা উপাদানগুলো প্রত্যাখা এবং পরোক্ষভাবে কাজ  করে। ভিটামিনের ভরপুর কালোজিরায় শর্করা ও আমিষ সহ বহু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ  এতে আরও রয়েছে কপার, ক্যালসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, নিয়াসিন, ফোলাসিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি। এমনকি এতে প্রোটিন, স্নেহ সহ চর্বির উপস্থিতিও টের পাওয়া যায়।
কালো জিরার উপকারিতা
কালোজিরার উপকারিতা একটি দুটি নয় বরংবহুমুখী উপকারী দিক এর সাথে লক্ষণীয়।কালোজিরা যেমন মসলা হিসেবে বহুল সমাদৃত ঠিক তেমনি এটি ডায়াবেটিস,প্রেসার,চুল  পড়াসহ ত্বকের যত্ন এবং আরো অন্যান্য সমস্যা সমাধানে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় । আসুন আমরা জেনে নিই কালোজিরার উপকারী দিকসমূহঃ

  • মসলা হিসেবেঃ কালোজিরা মসলা হিসেবে বেশি পরিচিত। এটি মূলত রান্নার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এর স্বাদ ও গন্ধ খাবারকে করে তোলে আরো আকর্ষণীয়। তাছাড়া বেকারির খাদ্য তৈরিতেও কালোজিরা ব্যবহার বেশ ভালোই লক্ষণীয়। যেমন বিস্কুট, নিমকি সহ বিভিন্ন ভাজাপোড়ায় ও কালোজিরা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়া বাঙালীর ডাল মসলায় ও কালোজিরা স্থান করে নিয়েছে পাকাপোক্ত।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণেও কালোজিরা একটি অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।
  • চুল পড়া নিয়ন্ত্রণেঃ কালোজিরা তেল নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বিশেষ করে শ্যাম্পু শেষে এই তেল চুলের গোড়ায় মেসেজ করলে ভালো ফলাফল লক্ষ্য করা যায়।
  • দাঁতের সমস্যার সমাধানঃ দাঁতের সমস্যার সমাধানে কালোজিরা অত্যন্ত কার্যকরী। শুধু দাঁতের নয় বরং মারি সহ মুখের যেকোন সমস্যার কালোজিরায় রয়েছে সহজ সমাধান।
  • সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেঃ সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কালোজিরা তেল খুবই উপকারী। এই তিন নিয়মিত মাসাজ করলে ত্বকের যে কোন সমস্যা থেকে রেহাই নিলে এবং সেই সাথে মুখের দাগ এবং চর্ম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • এসিডিটি সমস্যাঃ এসিডিটি রোগের সমস্যা সমাধানও কালোজিরা উপকার দিয়ে থাকে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসিডিটির সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
  • কিডনি রোগ থেকে মুক্তিঃ কিডনি রোগ থেকে মুক্তি পেতে কালোজিরা এক অবাধ্য মহা ঔষধ। কালোজিরার নিয়মিত এবং সঠিক ব্যবহার কিডনি রোগ থেকে সুস্থতা দিয়ে থাকে।
  • প্রেসার নিয়ন্ত্রণেঃ প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও কালোজিরা ঔষধ হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদ্রিত এটি প্রেসাকে সঠিক রাখতে সহায়তা  করে।
  • মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতেঃ সন্তান জন্মের পর দেখা যায় মাতৃদুগ্ধে ঘাটতি। এই ঘাটতি পূরণে কালোজিরা বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে কালোজিরার ভর্তা অথবা কালোজিরা তেল নানাভাবে কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে। এটি মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
  • ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণেঃ কালোজিরা ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে থাকে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ উত্তম।

কালোজিরা অত্যন্ত কার্যকরী এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে বলে এটি সকলের কাছে বহু সমাদৃত। কালোজিরা গুণাগুণ  গুরুত্ব  বিবেচনায় ইসলাম  একটি হাদিস।

কালোজিরা খাওয়ার হাদিস 
সুনানে তিরমিজি হাদিস ২০৪৮ এ এসেছে , "আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা এই কালোজিরা ব্যবহার করবে কেননা এই কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ"।

এছাড়াও বুখারী শরীফ হাদিস নম্বর ৫৬৮৮ তে এসেছে "আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে"

তবে মনে রাখতে হবে রোগ আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ। আর তাই রোগাক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং আল্লাহর উপর  তাওয়াকুল বাড়িয়ে তুলতে হবে। কারণ রোগ থেকে মুক্তিদানের মালিক কেবল এবং কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা।

টানা ৭ দিন কালোজিরা খেলে কি হয় 
কালোজিরা প্রায় সব অসুখের ঔষধ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কালোজিরার নিয়মিত ব্যবহার নানা জটিল রোগ থেকে মুক্তি দিতে কার্যকরী। চুল পড়া থেকে শুরু করে পেটব্যথা প্রায় সব অসুখ থেকেই নিরাময় দিয়ে থাকে কালোজিরা। পদ্ধতি মেনে কালোজিরা ব্যবহার করলে অনেক অসুখী অল্প সময়ের মধ্যেই সেরে ওঠে। যেমনঃ

পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে কালোজিরার সাথে সাত থেকে আট চামচ দুধ মিশিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার করে সেবন করলে সাত দিনেই পেটের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কালোজিরা তেলও বেশ উপকারী।

শুধু পেটের সমস্যায় নয় বরং চুল পড়া রোধ করতেও কালোজিরা একটি কার্যকরী সমাধান। এক্ষেত্রে কালোজিরা, রসুন এবং নিম পাতার সংমিশ্রণ চুলকে মজবুত করতে সাহায্য করে। শ্যাম্পু করার পর কালোজিরা তেল মাথার ত্বকে মেসেজ করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় মাত্র সাত দিনে।

খালি পেটে কালোজিরার উপকারিতা
 ভিটামিন শর্করা আমিষ ইত্যাদি পুষ্টি করে সমৃদ্ধ কালোজিরার রয়েছে প্রায় ১০০ টিরও রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। ডায়াবেটিস থেকে ক্যান্সার কিংবা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি থেকে শুরু করে পেটের অসুখ যাবতীয় কাজে কালোজিরা জুড়ে মিলা ভার। তবে কালোজিরা ব্যবহারের বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে।

কালোজিরা পদ্ধতি মেনে যেকোনো সময়েই খাওয়া যায়। কালোজিরা ভোরবেলা খালি পেটে খাওয়াই অধিক সম্মত। এতে খুব সহজেই শরীরের সাথে মিশে যেতে পারে। খালি পেটে কালোজিরা খাবারের অন্তত 30 মিনিট আগে খাওয়া  উচিত। তবে ভোরবেলা খালি পেটে মধু এবং কালোজিরা মিশ্রণ রোগ নিরাময় করতে অত্যন্ত পারদর্শী। প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে মধু এবং কালোজিরা খেলে বিভিন্ন ধরনের উপকার মিলে সহজেই। যেমন পেটের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, মস্তিষ্কের ঠান্ডা রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
ইউনানী ভেষজ হোমিও সহ নানা চিকিৎসায় ব্যবহৃত কালোজিরা তার পুষ্টিগুণ এবং ঔষধি গুণের জন্য ব্যাপকভাবে সমাদৃত। কালোজিরা খাওয়ার নানা পদ্ধতি রয়েছে। যেমন কালোজিরা তেল হিসেবে খাওয়া যায়, কালোজিরা পাউডার খাওয়া যায় এবং কালোজিরা চিবিয়েও খাওয়া যায়। খেতে সুস্বাদু বিধায় কালোজিরা যেকোনো ভাবেই খুব সহজে খাওয়া যায়। তবে যেভাবে খাওয়া হোক না কেন কালোজিরা উপকার মিলবে ঠিকই।

অনেক পুষ্টিবিদদের মতে কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার চেয়ে কালোজিরার তেল বেশি উপকারী। তবে কালোজিরা তেল দাম একটু বেশি হওয়ায় কালোজিরার বীজ ই অনেকে খেতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।

প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
 প্রতিদিন নিয়ম করে কালোজিরা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অধিকতর উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরা খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় খুব সহজে। তবে মনে রাখতে হবে প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। কালোজিরা খেতে হবে পরিমাণ মত। কেননা শুধু কালোজিরাই নয় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিমাণ মেনে চলায় উত্তম।
প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত
 ভিটামিন বি১ বি২ সহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদানের সমৃদ্ধ কালোজিরা প্রতিদিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ব্যাপক পরিমাণে উপকারী তবে মনে রাখতে হবে প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পরিমাণ মেনে চলতে হবে। পরিমাণের অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
কালোজিরা খাওয়ার অপকারিতা
পৃথিবীতে যে সকল জিনিসের উপকারিতা রয়েছে সেসব জিনিসের অল্প পরিমাণে হলেও অপকারিতা বিদ্যমান। হাজারো পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ কালোজিরার রয়েছে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক সব ঔষুধি গুন। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই বটে তবে পরিমাণ মেনে কালোজিরা খাওয়ায় উত্তম। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খাবার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সেই সাথে মনে রাখতে হবে যদিও দুই বছরের অধিক শিশুদের নিয়মিত কালোজিরা খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য ভীষণ উপকারী যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অত্যন্ত কার্যকর তবে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
সারকথা 
সবশেষে বলা যায় প্রাকৃতিক খাদ্যাভাসের অভ্যাস গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় বটে। এতে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কম থাকে। বিধায় শরীরের অনেকাংশে ক্ষতি সাধন থেকে রেহাই পাওয়া যায়। এ দিক বিবেচনায় বলা চলে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কালোজিরার ব্যবহার অনন্য। আর তাই পরিমাণ মেনে কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে করে তুলতে পারে অসুস্থ হীন এবং উত্তম স্বাস্থ্যের অধিকারী।

আজ এ পর্যন্তই আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। আমাদের আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তবে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে পাশে থাকার অনুরোধ রইলো ।

ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪